add

কবি কাজী নজরুল ইসলাম |Rebel poet Kazi Nazrul Islam|

কবি কাজী নজরুল ইসলাম |Rebel poet Kazi Nazrul Islam|

কবি কাজী নজরুল ইসলাম
কবি কাজী নজরুল ইসলাম



  কাজী নজরুল ইসলাম ছিলেন বিংশ শতাব্দীর অন্যতম জনপ্রিয় বাঙালি কবি, সঙ্গীতজ্ঞ, সংগীতস্রষ্টা, দার্শনিক,যিনি বাংলা কাব্যে ও নাটকে অনন্য ভূমিকা রেখেছেন।তিনি বাংলাদেশের জাতীয় কবি এবং অবিভক্ত বাংলার সাহিত্য,সমাজ ও সংস্কৃতি ক্ষেত্রের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিত্ব।

বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে তিনি ‘বিদ্রোহী কবি’এবং তিনি বাংলা গানের জগতে ‘বুলবুল’নামে খ্যাত।তিনি বিদ্রোহী কবিতা বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের জন্য গুরুত্ব ভূমিকা রেখেছেন।তার কবিতায় বিদ্রোহী দৃষ্টিভঙ্গির কারণে তাঁকে বিদ্রোহী কবি নামে আখ্যায়িত করা হয়েছে।বিদ্রোহী কবিতা লেখার জন্য কারাবরন করেছেন।কাজী নজরুল ইসলাম ছিলেন সাম্য ও মানবতার কবি, প্রেমের কবি, বিদ্রোহের কবি।

কাজী নজরুল ইসলামের সংক্ষিপ্ত পরিচয়ঃ

  • জন্ম তারিখঃ বাংলা ১৩০৬ সালের ১৪ই জ্যৈষ্ঠ,ইংরেজী ১৮৯৯ খ্রিষ্টাব্দের ২৪ মে
  • জন্ম স্থানঃভারতের পশ্চিমবঙ্গের 
  • জেলাঃবর্ধমান,আসানসোল মহকুমার
  • গ্রামঃচুরুলিয়া 
  • বাবার নামঃকাজী ফকির আহমেদ
  • মায়ের নামঃ জাহিদা বেগম
  • ডাকনামঃ দুখুমিয়া
  • স্ত্রীঃ নার্গিস আসার খানম,প্রমীলা দেবী (তার সাথে দ্বিতীয় বিয়ে হয়)
  • সন্তানঃ কৃষ্ণ মুহাম্মদ, অরিন্দম খালেদ (বুলবুল)

  কাজী নজরুল ইসলাম এর জীবনী

কাজী নজরুল ইসলাম ছিলেন বিস্ময়কর প্রতিভার অধিকারী। তিনি বাংলা কাব্য ও সাহিত্যের প্রচন্ড ব্যাপক  বিপ্লব ঘটিয়েছিলেন। কাজী নজরুল ইসলামে অত্যাচারী শাসক গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে  কলমকে অস্ত্র হিসেবে ধরেছিলেন।তিনি ছিলেন তিন ভাই এবং বোন।তার সহোদর তিন ভাই ও দুই বোনের নাম হল: সবার বড় কাজী সাহেবজান, কনিষ্ঠ কাজী আলী হোসেন, বোন উম্মে কুলসুম। কাজী শৈশবে পিতৃহীন হওয়ার পর তিনি দারিদ্রের মধ্যে পড়েন এবং অভিভাবকহীনতার জন্য চরম উচ্ছৃঙ্খলাতার পড়েন।

তিনি স্থানীয় মক্তবে,ইসলাম ধর্ম ,দর্শন এবং ইসলামী ধর্মতত্ত্ব অধ্যয়ন শুরু করেন।১৯০৮ সালে যখন তার বাবা মারা যান তখন তার বয়স ছিলো বছর। এসব এর মধ্যেও  মধ্যেও তিনি মক্তবে তারপর  হাইস্কুলে পড়াশোনা চালিয়ে গেছিলেন;তারপরও তিনি থেমে যাননি। মক্তব থেকে নিম্ন মাধ্যমিক পরীক্ষায় পাস করে এবং সেই মক্তবেই শিক্ষকতার কাজে নিযুক্ত হন। তার পর পরই হাজী পালোয়ানের কবরের সেবক এবং মসজিদের মুয়াযযিন হিসেবে তার কর্ম জীবনের সূত্রপাত ঘটে ।

 বাংলা সাহিত্যে ইসলামী চেতনা-চর্চার সূত্রপাত তিনিই করেছিলেন ।অর্থসংকটে থাকার কারণে তিনি  লেটো গানের দলে আবার কখনো বা তিনি মাংসের দোকানে চাকরিও নিয়েছিলেন। এই সময়েই লেটো গানের দলে গীত রচনা ও সুর সংযোজনা করার মাধ্যমে তার  প্রতিভার প্রথম বিকাশ ঘটে। ১৯১৭ সালের শেষভাগে মাধ্যমিকের পরীক্ষা না দিয়ে তিনি সৈনিক হিসেবে সেনাবাহিনীতে যোগদান করেন। তাই বাল্যজীবন থেকেই বেশ কষ্টের মধ্যেও অতিবাহিত করতে হয়েছে।

সাহিত্য প্রতিভার বিকাশ

১৯১৭ খ্রিষ্টাব্দের নজরুল সেনাবাহিনীতে যোগদান করেন। প্রশিক্ষণ এর  উদ্দেশ্যে তিনি নওশেরায় যান এবং প্রশিক্ষণ শেষে করাচি সেনানিবাসে একজন সৈনিক হিসেবে  জীবন অতিবাহিত করেন। ১৯১৭ খ্রিষ্টাব্দের শেষভাগ থেকে ১৯২০ খ্রিষ্টাব্দের মার্চ-এপ্রিল পর্যন্ত, তাঁর সৈনিক জীবনের প্রায় আড়াই বছরের সময়কালে তিনি ৪৯ বেঙ্গল রেজিমেন্টের সাধারণ সৈনিক কর্পোরাল থেকে কোয়ার্টার মাস্টার হাবিলদার হিসেবে দায়িত্ব সামলেছিলেন।

 রেজিমেন্টে কর্মরত অবস্থাতেই তিনি ফার্সি ভাষা শিখছিলেন;  তিনি  তার পাশাপাশি গদ্য-পদ্যের চর্চাও চালিয়ে গিয়েছিলেন।দেশী-বিদেশী নানা ধরনের বাদ্যযন্ত্র সহযোগে সঙ্গীতের চর্চা অব্যাহত রেখেছিলেন। নজরুলের সাহিত্য চর্চার হাতেখড়ি এই করাচি সেনানিবাসেই। সেই সময়ে তিনি প্রথম বিশ্বযুদ্ধে অংশ নেন।১৯২০ খ্রিষ্টাব্দে যুদ্ধের অবসান ঘটলে ছাঁটাইয়ের খাতায় নাম উঠেছিল নজরুলের।

  কাজী নজরুল ইসলামের রচিত সাহিত্য কর্ম 

              কবিতা 

  •  ১.অগ্নিবীণা (১৯২২)
  • ২.সঞ্চিতা (কবিতা সংকলন ১৯২৫)
  • ৩.ফনীমনসা ( ১৯২৭) 
  • ৪.চক্রবাক (১৯২৯)
  • ৫.সাতভাই চম্পা (১৯৩৩)
  •  ৬.নির্ঝর (১৯৩৯)
  •  ৭.নতুন চাঁদ (১৯৩৯)
  •  ৮.মরুভাস্কর (১৯৫১)
  •  ৯.সঞ্চয়ন (কবিতা সংকলন১৯৫৫)
  •  ১০.নজরুল ইসলাম: ইসলামী কবিতা (কবিতা সংকলন) ১৯৮২ 

           কবিতা ও সংগীত

  • ১.দোলন-চাঁপা (কবিতা এবং গান) ১৯২৩
  • ২.বিষের বাঁশি (কবিতা এবং গান) ১৯২৪
  • ৩.ভাঙ্গার গান (কবিতা এবং গান) ১৯২৪
  • ৪.ছায়ানট (কবিতা এবং গান) ১৯২৫
  • ৫.চিত্তনামা (কবিতা এবং গান) ১৯২৫
  • ৬.সাম্যবাদী (কবিতা এবং গান) ১৯২৫
  • ৭.পুবের হাওয়া (কবিতা এবং গান) ১৯২৬
  • ৮.সর্বহারা (কবিতা এবং গান) ১৯২৬
  • ৯.সিন্ধু হিন্দোল (কবিতা এবং গান) ১৯২৭
  • ১০.জিঞ্জীর (কবিতা এবং গান) ১৯২৮
  • ১১.প্রলয় শিখা (কবিতা এবং গান) ১৯৩০
  • ১২.শেষ সওগাত (কবিতা এবং গান) ১৯৫৮

               ছোট-গল্প 

  • ১. ব্যাথার দান (১৯২২)
  • ২.রিক্তের বেদন (১৯২৫)
  • ৩.শিউলি মালা (১৯৩১)

                   সংগীত

  •  ১.বুলবুল (গান) ১৯২৮
  • ২.সন্ধ্যা (গান) ১৯২৯
  • ৩.চোখের চাতক (গান) ১৯২৯
  • ৪.নজরুল গীতিকা (গান সংগ্রহ) ১৯৩০
  • ৫.নজরুল স্বরলিপি (স্বরলিপি) ১৯৩১
  • ৬.চন্দ্রবিন্দু (গান) ১৯৩১
  • ৭.সুরসাকী (গান) ১৯৩২
  • ৮.বনগীতি (গান) ১৯৩১
  • ৯.জুলফিকার (গান) ১৯৩১
  • ১০.গুল বাগিচা (গান) ১৯৩৩
  • ১১.গীতি শতদল (গান) ১৯৩৪
  • ১২.সুর মুকুর (স্বরলিপি) ১৯৩৪
  • ১৩.গানের মালা (গান) ১৯৩৪
  • ১৪.স্বরলিপি (স্বরলিপি) ১৯৪৯
  • ১৫.বুলবুল দ্বিতীয় ভাগ (গান) ১৯৫২
  • ১৬.রাঙ্গা জবা (শ্যামা সংগীত) ১৯৬৬

             উপন্যাস

  •  ১.বাঁধন হারা (উপন্যাস) ১৯২৭
  • ২.মৃত্যুক্ষুধা (উপন্যাস) ১৯৩০
  • ৩.কুহেলিকা (উপন্যাস) ১৯৩১ 

             নাটক

  • ১.ঝিলিমিলি (নাটক) ১৯৩০
  • ২.আলেয়া (গীতিনাট্য) ১৯৩১
  • ৩.পুতুলের বিয়ে (কিশোর নাটক) ১৯৩৩
  • ৪.মধুমালা (গীতিনাট্য) ১৯৬০
  • ৫.ঝড় (কিশোর কাব্য-নাটক) ১৯৬০
  • ৬.পিলে পটকা পুতুলের বিয়ে (কিশোর কাব্য-নাটক) ১৯৬৪

            প্রবন্ধ 

  • ১. যুগবানী (প্রবন্ধ) ১৯২৬
  • ২.ঝিঙ্গে ফুল (প্রবন্ধ) ১৯২৬
  • ৩.দুর্দিনের যাত্রী (প্রবন্ধ) ১৯২৬
  • ৪.রুদ্র মঙ্গল (প্রবন্ধ) ১৯২৭
  • ৫.ধুমকেতু (প্রবন্ধ) ১৯৬১ 

           অনুবাদ এবং বিবিধ

  •  ১.রাজবন্দীর জবানবন্দী (প্রবন্ধ) ১৯২৩
  • ২.দিওয়ানে হাফিজ (অনুবাদ) ১৯৩০
  • ৩.কাব্যে আমপারা (অনুবাদ) ১৯৩৩
  • ৪.মক্তব সাহিত্য (মক্তবের পাঠ্যবই) ১৯৩৫
  • ৫.রুবাইয়াতে ওমর খৈয়াম (অনুবাদ) ১৯৫৮
  • ৬.নজরুল রচনাবলী (ভলিউম ১-৪,বাংলা একাডেমী) ১৯৯৩

   ১৯৪২ সালে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন।এতে তিনি বাকশক্তি হারিয়ে ফেলেন তার অসুস্থতার কথা  জানা যায় ১৯৪২ সালের জুলাই মাসে।১৯৪২ সালের শেষের দিকে তিনি মানসিক ভারসাম্যও হারিয়ে ফেলেন।  ১৯৫২ সালে নজরুলকে মানসিক হাসপাতালে পাঠানো হয়।এরপর ১৯৫৩ সালের মে মাসে নজরুলকে চিকিৎসার জন্য লন্ডন পাঠানো হয়। অবশেষে ১৯৭৬ সালে নজরুলের স্বাস্থ্যেরও অবনতি হতে শুরু করে। জীবনের শেষ দিনগুলো কাটে ঢাকার পিজি হাসপাতালে। অবশেষে কাজী নজরুল ইসলাম  ২৯ আগস্ট ও১৯৭৬ সালে মৃত্যুবরণ করেন।

  নজরুল তার একটি কবিতায় বলেছিলেন-

“মসজিদেরই পাশে আমায় কবর দিয়ো ভাই,যেন কবর থেকে মুয়াজ্জিনের আযান শুনতে পাই”

এই কবিতায় তার  ইচ্ছার প্রকাশ পেয়েছে বলে, এই ইচ্ছার বিষয়টি বিবেচনা করে কাজী নজরুল ইসলামকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে সমাধি দেওয়া হয়।  


 আধুনিক বাংলা কাবিতা ও সাহিত্যে জগতেন সবচেয়ে বড় প্রেরণা কাজী নজরুল ইসলাম। তার  কাব্যে আছে মৃত্যুঞ্জয়ী চিরযৌবনের জয়ধ্বনি,অগ্নিবীণার সুর ঝংকার;যিনি ধ্বীরস্থির অঞ্চল বাংলা কাব্যে বয়ে এনেছিলেন দুর্বার কালবৈশাখীর ঝড়,তিনি বিদ্রোহ ও যৌবনের কবি। তিনি বাংলাদেশের জাতীয় কবি।কবি নজরুর ইসলামকে আমৃত্যু পর্যন্ত মনে রাখবে।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url