add

রাতে কিজন্য বারবার ঘুম ভেঙে যায়? ঘুম ভেঙে গেলে করণীয় কি?

 

রাতে কিজন্য বারবার ঘুম ভেঙে যায়?
 রাতে কিজন্য বারবার ঘুম ভেঙে যায়? 



ঘুম মানুষের জীবনের জন্য খুবই গুরুত্বর্পূন।আর পর্যাপ্ত ঘুম সুস্বাস্থ্যের অন্যতম চাবিকাঠি। প্রতিদিন কমপক্ষে ৭-৮ ঘণ্টা ঘুম আমাদের সুস্বাস্থ্যর জন্য প্রয়োজন।কিন্তু নিরবচ্ছিন্ন ৭-৮ ঘণ্টা ঘুম শুধু আমাদের সুস্বাস্থ্যর জন্য নিশ্চিত করে না;বরং এটি আমাদের সামগ্রিকভাবে প্রভাব ফেলে আমাদের  জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপে। কিন্তু অনেকের হঠাৎ করেই মাঝরাতে ঘুম ভেঙে যায়।শিশুর কান্না,অনাকাঙ্ক্ষিত বিভিন্ন ধরনের আওয়াজ,অস্বস্তিকর খারাপ বিছানা,ব্যক্তিগত বিভিন্ন সমস্যা ইত্যাদি কারণে হঠাৎ করে রাতে ঘুম ভেঙে যেতে পারে।কিছু মানুষের আবার ঘুমের সমস্যাও রয়েছে।

কিছু মানুষের বিশেষ করে রাতে একবার ঘুম ভেঙে গেলে আর ঘুম আসেনা। ঘুমের জন্য বিছানায় এপাশ-ওপাশ করতে হয়।যা শরীরের জন্য ঘুম বিভিন্ন ধরনের নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। কিন্তু এমনটা হয় কেন?

বিশেষজ্ঞরা বলেছেন,কোনো ব্যক্তি  টানা ৯০ মিনিট ব্যাঘাত ছাড়াই পর্যন্ত ঘুমাতে পারেন।কিন্তু সেই ঘুমেরও বিভিন্ন স্তর আছে। এই ৯০ মিনিটের চক্রের মধ্যেই ঘুম হালকা,কখনও গভীর,হতে পারে। হালকা ঘুম সহজেই ভেঙে যেতে পারে। ঘুম ঠিকমতো না হলে মানসিক ও শারীরিক বিভিন্ন ধরনের সমস্যা হতে পারে। তাই প্রত্যেক ব্যক্তিকে প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমানো দরকার।

রাতে ঘুম না আসার কারন-

  • অলসতা অনুভূতি।
  • দিনে পর্যাপ্ত পরিমানে ঘুমানো।
  • ক্যাফেইন ধূমপান ও মদ্য পান করা।
  • খিটখিটে মেজাজ।
  • ঘুমানোর সময় প্রতিদিন পরিবর্তন করা।
  • সঠিকভাবে কিছু  না করতে পারা।
  • ঘুমানোর সময় মোবাইল বা টিভি দেখা।
  • সেক্স করার ইচ্ছে জাগা।
  • মনোনিবেশ করতে অক্ষমতা।
  • ঘরে মধ্যে বা আশেপাশে অতিরিক্ত শব্দ এবং ঘরের মধ্যে উজ্জ্বল আলো।

রাতে ঘুম ভাঙার কারন-

বর্তমান সময়ে অনেকেরই ভালো ঘুম হয় না এর মূল কারণ হতে পারে রাত জেগে ফোনে আসক্তি,নানা ধরনের দুঃচিন্তা ইত্যাদি।তাছাড়া স্লিপ অ্যাপনিয়ার কারণেই অনেকের রোজ রাতে একই সময় ঘুম ভেঙে যায়।আর এটা একটা গুরুতর রোগ। অনেকেই এই রোগটি সম্পর্কে অবগত নন।রাতে ঘুম ভাঙাটা বিশেষ বড় সমস্যার নয়,বরং ঘুম একবার ভেঙে যাওয়ার পর আর ঘুম না আসা পারাটাই আসল সমস্যা।এমন প্রতিনিয়ত হতে থাকলে  থাকলে দুশ্চিন্তা বাড়ে যা আমাদের ক্ষতি করে সিম্প্যাথেটিক নার্ভাস সিস্টেমের। এর ফলে হার্টবিট বাড়তে পারে।হঠাৎ ঘুম ভেঙে গেলে,তারপর পূনয়ার ঘুমিয়ে পড়লে সেটাকে বলা হয় অনিদ্রা। এটার অন্য কারণও থাকতে পারে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বেশি রাত জেগে কাজ করলে মস্তিষ্ক ঠিকভাবে বিশ্রাম পায় না।ফলে একটু পরপর  ঘুম ভেঙে যেতে পারে। অতিরিক্ত স্ট্রেস,উৎকণ্ঠা,কাজের চিন্তা নিয়ে ঘুমাতে গেলে ঘুম ভেঙ্গে যেতে পারে। তাছাড়া মানসিক অস্বস্তি,মানসিক চাপের কারনেও ঘুম ভেঙ্গে যেতে পারে। তাছাড়া ঘুমানোর আগে পানি কম পান করুন কারন,বেশি পানি পান করার ফলে রাতে বারবার প্রস্রাবের চাপ হতে পারে।এতে স্বাভাবিক ভাবেই ঘুমের ব্যাঘাত ঘটবে। তাই ঘুমানো যাওয়ার আগে বেশি পানি পান না করাই ভালো। ঘুমানোর আগে অ্যালকোহল পান করলে ঘুম আসতে সমস্যা হতে পারে। 

 ভালো ঘুম না হলে যেসব ক্ষতি হতে পারে-

  • ডায়াবিটিস (Diabetes)
  • অবসাদ (Depression)
  • মাংসপেশিতে খিঁচ ধরা (Muscle spasms)
  • প্রেশার (Pressure)
  • ওজন বেড়ে যাওয়া (Obesity)
  • রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়া(Decreased immunity)ইত্যাদি সমস্যা দেখা দিতে পারে।

চোখে ঘুম আনতে যা করবেন-

  •  রাতের দিকে কোন  জোরালো আলোর দিকে তাকানো থাকা যাবে না।
  •  দিনের বেলায় অতিরিক্ত  ঘুমানো যাবে না বেশ করে ৯০ মিনিটের বেশি সময়।
  • ঘুমানোর আগে  চা-কফি পান করা যাবেন না।চা-কফি পান করলে ঘুমের সমস্যা হয়
  • ঘুম চোখে যখনই আসবে ,সেই সময়েই ঘুমাতে যান। দেরি করবেন না। এছাড়া প্রতিদিন একই সময়ে ঘুম থেকে ওঠার চেষ্টা করুন।
  • ঘুমেরআগে রিল্যাক্স করার জন্য কিছু করুন।
  • ঘুমানোর আগে থেকেই মোবাইল,টিভির থেকে দূরে থাকুন।
  • নিয়মিত ঘুমের সমস্যা থাকলে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ মতো সেল্ফ হিপনোসিজম করতে পারেন।
  • শোয়ার ঘর যতো পারেন অন্ধকার রাখবেন,অন্ধকার ঘরে ঘুম বেশী  ভালো হয়।
  • ভিটামিন ডি-র অভাবে ঘুমের সমস্যা ঘটে।তাই ভিটামিন ডি খেতে পারেন।
  • রাতে হঠাৎ করে ঘুম ভেঙে গেলে বিছানা থেকে উঠা যাবে না। বরং শুয়ে থেকে রেস্ট নিতে হবে।দেখবেন ঠিক আবার ঘুম চলে আসবে।
  • রাতে ঘুমের সমস্যা বেশী হলে ঘুমানোর আগে হালকা গরম পানি দিয়ে গোসল করলে ঘুম ভালো হয়। 
  • ঘুম না আসলে বই পড়তে পারেন।বই পড়লে ঘুম আসে।

চোখে ঘুম আনতে নিচের ৫টি খাবার তালিকায় রাখতে পারেন-

এমন কিছু খাবার আছে,যা খেলে ঘুমের সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব যেমনঃ পুষ্টিবিদদের মতে ক্যালশিয়াম,ম্যাগনেশিয়াম,জিঙ্ক এবং ভিটামিন ডি র মতো উপাদানগুলি ঘুম আনতে  সাহায্য করে থাকে।শরীরে এসকল উপাদানগুলির অভাবে ঘুমের সমস্যা হয়ে থাকে।সেরোটোনিন,মেলাটোনিন,ট্রিপটোফ্যান এরে অভাবেও ঘুমের সমস্যা হয়ে থাকে। প্রতিদিন নিম্নের খবারগুলো খেলে ঘুমের সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যেতে পারে-

১। গরম দুধঃঅনিদ্রার ঘুমের সমস্যা কাটানোর জন্য প্রতিদিন রাতে ঘুমোনোর আগে এক গ্লাস গরম দুধ খাওয়া যেতে পারে। দুধের মধ্যে থাকা সেরোটোনিন ও ট্রিপটোফ্যান নামক অ্যামাইনো অ্যাসিড নিদ্রা আনতে হেল্প করে থাকে।

২। আখরোটঃএক গবেষনায় দেখা গেছে  প্রতিদিন নিয়মিত আখরোট খেলে  ভালো ঘুম হয়। 

৩। কুমড়োর বীজঃপ্রতিদিন হালকা শুকনো ভাজা কুমড়োর বীজ খেলে ভালো ঘুম হতে পারে।কুমড়োর বীজে ট্রিপটোফ্যানের  উৎস থাকে যা ভালো ঘুম আসতে সাহায্যে করে থাকে।

৪। কলাঃনিয়মিত কলা খেতে পারেন।কারন,কলাতে থাকা ভিটামিন বি-৬,পটাশিয়াম,ম্যাগনেশিয়াম,ট্রিপটোফ্যান থাকে যা ঘুম আসতে সাহায্য করে।

৫।চিয়া বীজঃপানিতে ভিজিয়ে চিয়া বীজ নিয়মিত খেলে ভালো ঘুম হয়।কারন,চিয়া বীজেও প্রচুর ট্রিপটোফ্যান থাকে।

কোন কোন ভিটামিন এর অভাবে ঘুমের সমস্যা হয়-

  • ম্যাগনেসিয়ামঃবিশেষজ্ঞদের মতে, ম্যাগনেসিয়াম মানসিক চাপ,উদ্বেগ, রক্তচাপ কমায়। এছাড়াও ম্যাগনেসিয়াম  স্নায়ু ও পেশীকেও শক্তিশালী করে হাড়কে মজবুত করে । সোয়া,কালো মটরশুটি,অ্যাভোকাডো এবং আলুতে ম্যাগনেসিয়াম থাকে।
  • ক্যালসিয়ামঃক্যালসিয়াম হাড় মজবুত করে এটা আমরা সবাই জানি।ক্যালসিয়ামের এর ঘাটতি ঘুমের অনেক সমস্যা হয়।তাই প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় ক্যালসিয়ামযুক্ত  খাবার অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।দুগ্ধজাত খাবারে বেশী ক্যালসিয়াম পাওয়া যার।
  • ভিটামিন ডিঃভিটামিন ডি -এর সর্বোত্তম উৎস হিসেবে বিবেচনা করা হয় সকালের মিষ্টি রোদকে। ভিটামিন ডি -এর অভাব ঘুমের অনেক সমস্যা হয়। 
  • ভিটামিন B12:ভিটামিন B12 -এর অভাবের কারণে অনেক ঘুমের সমস্যা হতে পারে।  মুরগির মাংস, দুগ্ধজাত দ্রব্য,ডিম ও মাছে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন   B12 থাকে।

তাই আমাদের সঠিক ভাবে ঘুমানোর জন্য সঠিক নিয়মগুলো অবশ্যই পালন করতে হবে।কারন,ঘুম আমাদের জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বর্পূন বিষয়।আর ঘুম ভারো হলে মনমানসিকতা শরীর স্বাস্থ ভালো থাকে। 

  আরো পড়ুন-ছেলেদের ইসলামিক নাম অর্থসহ,কবি কাজী নজরুল ইসলামটমেটো আসলে কি ফল নাকি সবজি?,কোন দেশকে টেকনোলজি জনক বলা?,ভয়ানক আনন্দ;৯০ দশকের বিটিভিতে প্রচারিত হওয়া জনপ্রিয় ৫ টি সিরিজ..


Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url